‘আমি চট্টগ্রামবাসীকে এক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সিআরবির শতবর্ষী গাছ ও নান্দনিক সৌন্দর্য আমাদের রক্ষা করতে হবে। সিআরবির বাইরে রেলওয়ের আরও জায়গা আছে। সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করুক, নগরবাসীর কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু শিরিষতলার মতো বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস নেওয়ার একটি উন্মুক্ত পার্ককে ধ্বংস করা হলে চট্টগ্রামের মানুষ করোনা ঝুঁকি উপেক্ষা করে মানবব্যূহ রচনা করবে।’
সিআরবির শতবর্ষী গাছ রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সকলই এক হয়ে রুখে দাঁড়ান।
চট্টলাপ্রেমী মোঃ খোরশেদ আলম সুজন
( সাবেক প্রশাসক, চসিক)
বৃটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের হেডকোয়ার্টার চট্টগ্রামের সিআরবি হওয়াতে এই শহরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেলের অনেক জায়গা৷ ফয়স লেকসহ পুরো পাহাড়তলী, আমবাগান, জিলাপী পাহাড়, কুত্তা বাংলো, হাতি বাংলো সবই রেলের। এর বাইরেও হালিশহর ও পোর্টেও রেলের প্রচুর জায়গা৷ তারপরেও ধ্বংস হতে চলা চট্টগ্রাম শহরের অতীতের সবচে সুন্দর অংশ হয়ে টিকে আছে সিআরবি-টাইগার পাস এরিয়া।
১৫-২০ বছর আগ পর্যন্তও এই এলাকা ছিলো ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য। গত ১২-১৫ বছর যাবত এই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থতি ভালো হয়েছে৷ নাগরিকরা তাই এখানে সকাল সন্ধ্যায় সমাবেত হয়, এর বাইরেও বসে বৈশাখী মেলা, সারা বছরই হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রেলের আর সহ্য হলোনা এটা।
বিএনপির আমলে মীর নাছিরের ইন্ধনে রেলের সম্পদ ফয়স লেক অল্প টাকার বিনিময়ে দীর্ঘমেয়াদী লিজ দেয়ায় ফয়স লেক চলে গেছে সাধারণ নাগরিকদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। (আগে ফয়স লেকের এন্ট্রি টিকেট ছিলো ৩টাকা, এখন কনকর্ডের হাতে দেয়ার পর ৩০০ টাকা।) এখন নগরীর হৃদপিন্ড, নগর ঐতিহ্য সিআরবিকেও অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে তুলে দেয়া ইউনাইটেড গ্রুপের হাতে এক্সপেনসিভ প্রাইভেট হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ বানাতে।
ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতাল থাকে চট্টগ্রামের গরু খাওয়া বড়লোক হৃদরোগীতে ভর্তি, বড়লোকের এই হাসপাতাল থেকে গরীবরা কোন উপকার পাবেনা। কারণ ৯৯% মানুষই এফোর্ড করতে পারবেনা ইউনাইটেডের খরচ৷ তারপরও হাসপাতাল যদি করতেই চাও তবে সিআরবি কেন? চট্টগ্রান শহরে কি রেলের জায়গার অভাব পড়েছে?
শুধু শত শত শতবর্ষী গাছের কারণে নয়, ঐতিহ্যগত কারণেই সিআরবি এলাকাকে রাখতে হবে অবিকৃত। রেলের জায়গার কোন অভাব নাই যে সিআরবি ধ্বংস করে এই জায়গাতেই বেসরকারী অর্থলোভী ইউনাইটেড গ্রুপকে হাসপাতাল করতে দিতে হবে৷ এই কাজে চট্টগ্রামের যে নেতা দালালী করবে সে চিহ্নিত হয়ে থাকবে মীরজাফর হিসেবে এবং নিক্ষিপ্ত হবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে৷ চট্টগ্রাম বসবাসরত আমার সকল বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ রইলো এ ব্যাপারে আপনাদের প্রতিবাদ জারি রাখুন।
ফিজিকালি না পারলে সোশাল মিডিয়ায় একটা হাউকাউ লাগিয়ে দিন। দূরের ব্রাজিল আর্জেন্টিনার জন্য পারলে নিজের শহর বাঁচাতে পারবেন না? নিশ্চিত করুন কোনভাবেই যাতে এখানে কোন রকম স্থাপনা গড়ে উঠতে না পারে। চট্টগ্রাম শহরের স্বার্থেই সিআরবিকে রাখতে হবে অবিকৃত!
©®: Apu Nazrul
Source:DSC
আপনার মতামত দিন